Friday, December 25, 2009

২+২=৩ - রাডার

0 comments
দেখো দেখো আজকের পত্রিকায় কয় টা বাজে
দেখো দেখো হাতের ঘড়িতে আজ কি লিখেছে ।।
দেখো দেখো সবি ঠিক আছে শুধু মাথা ঠিক নাই
ইচ্ছে করে দু পা তুলে আকাশে দাড়াই।।

দেখো দেখো লেম পোস্টে আজ চাঁদ ঝুলছে
দেখো দেখো সূর্যটা থেকে আজ বরফ ঝরছে।।

দেখো দেখো সবি ঠিক আছে শুধু মাথা ঠিক নাই
ইচ্ছে করে দু পা তুলে আকাশে দাড়াই।।

ও জোস তোমাকে আজ ব্যাপক লাগছে
এ বেলায় আকাশের তারা গুলো কাপছে।।
দেখো দেখো সবি ঠিক আছে শুধু মাথা ঠিক নাই
ইচ্ছে করে দু পা তুলে আকাশে দাড়াই।।


শোন শোন ফিজিক্স ক্লাসে আজ কবিতা পড়াচ্ছে
দেখো দেখো ফটবল ম্যাচে শচীন উইকেট হারাচ্ছে।।
দেখো দেখো সবি ঠিক আছে শুধু মাথা ঠিক নাই
ইচ্ছে করে দু পা তুলে আকাশে দাড়াই।।

Wednesday, December 23, 2009

আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে - লালন শাহ

0 comments
আছে আদি মক্কা এই মানব দেহে
দেখ না রে মন চেয়ে।
দেশ-দেশান্তর দৌড়ে এবার
মরিস্‌ কেন হাঁপিয়ে।।
করে অতি আজব ভাক্কা
গঠেছে সাঁই মানুষ-মক্কা
কুদরতি নূর দিয়ে।
ও তার চার দ্বারে চার নূরের ইমাম
মধ্যে সাঁই বসিয়ে।।
মানুষ-মক্কা কুদরতি কাজ
উঠছে রে আজগুবি আওয়াজ
সাততলা ভেদিয়ে।
আছে সিংহ-দরজায় দ্বারী একজন
নিদ্রাত্যাগী হয়ে।।
দশ-দুয়ারী মানুষ মক্কা
গুরুপদে ডুবে দেখ না
ধাক্কা সামলায়ে।
ফকির লালন বলে, সে যে গুপ্ত মক্কা
আমি ইমাম সেই মিঞে।
ওরে সেথা যাই
কোন পথ দিয়ে।।

অমাবস্যার দিনে চন্দ্র থাকেন যেয়ে কোন শহরে - লালন সাঁই

0 comments
অমাবস্যার দিনে চন্দ্র থাকেন যেয়ে কোন শহরে।
প্রতিপদে হয় সে উদয়, দৃষ্ট হয় না কেন তারে।।
মাসে মাসে চন্দের উদয়
আমাবস্যা মাস-অন্তে হয়
সূর্যের অমাবস্যার নির্ণয়
জানতে হবে নেহাজ করে।।
ষোল কলা হলে শচী
তবে তো হয় পৌণমাসী
পনরই পূর্ণিমা কিসি
পণ্ডিতেরা কয় সংসারে।।
জানতে পারলে দেহ-চন্দ্র
স্বর্গ-চন্দ্রের পায় সে খবর
সিরাজ সাঁই কয়, লালন রে তোর
মূল হারালি কোলের ঘোরে।।

অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায় - লালন

0 comments
অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায়।
অমাবস্যে নাইরে চাঁদে দ্বি-দলে তার কিরণ উদয়।।
বিন্দু মাঝে সিন্ধু-বারি
মাঝখানে তার স্বর্ণগিরি
অধর চাঁদের শূন্যপুরী
সেহি তো তিল-প্রমাণ জায়গায়।।
যেথা রে সে চন্দ্র ভুবন
দিবারাত্রির নাই অম্বেষণ
কোটি চন্দ্র জিনি কিরণ
বিজলি সঞ্চারে সদায়।।
দরশনে দুঃখ হরে
পরশনে পরশ করে
এমনি সে চান্দের মহিমে
লালন ডুবে ডোবে না তায়।।

বিবিধ: আলো আমার আলো ওগো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আলো আমার আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা ,
আসো নয়ন-ধোওয়া আমার, আলো হৃদয়হরা ।।
নাচে আলো নাচে, ও ভাই, আমার প্রাণের কাছে
বাজে আলো বাজে, ও ভাই, হৃদয়বীণার মাঝে
জাগে আকাশ, ছোটে বাতস, হাসে সকল ধরা ।।
আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি ।
আলোর ঢেউয়ে উঠল নেচে মল্লিকা মালতী ।
মেঘে মেঘে সোনা, ও ভাই, যায় না মানিক গোনা
পাতায় পাতায় হাসি, ও ভাই, পুলক রাশি রাশি
সুর নদীর কূল ডুবেছে সুধা-নিঝর-ঝরা ।।

বিবিধ: কৃষ্ণকলি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের'পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা, মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে, আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


এমনি করে কাজল কালো মেঘ জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

প্রকৃতি: আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়
লুকোচুরির খেলা।
নীল আকাশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা।
আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে,
উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে,
আজ কিসের তরে নদীর চরে
চখাচখির মেলা।


ওরে যাবো না আজ ঘরে রে ভাই,
যাবো না আজ ঘরে!
ওরে আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ
নেব রে লুঠ করে।
যেন জোয়ার জলে ফেনার রাশি
বাতাসে আজ ফুটেছে হাসি,
আজ বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি
কাটবে সারা বেলা।

প্রকৃতি: আজি তোমায় আবার - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে
যে কথা শুনায়েছি বারে বারে॥
আমার পরানে আজি যে বাণী উঠিছে বাজি
অবিরাম বর্ষণধারে॥
কারণ শুধায়ো না, অর্থ নাহি তার,
সুরের সঙ্কেত জাগে পুঞ্জিত বেদনার।
স্বপ্নে যে বাণি মনে মনে ধ্বনিয়া উঠে ক্ষণে ক্ষণে
কানে কানে গুঞ্জরিব তাই
বাদলের অন্ধকারে॥

প্রকৃতি: বহু যুগের ও পার হতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বহু যুগের ও পার হতে আষাঢ় এল আমার মনে,
কোন্ সে কবির ছন্দ বাজে ঝরো ঝরো বরিষনে॥
যে মিলনের মালাগুলি ধুলায় মিশে হল ধূলি
গন্ধ তারি ভেসে আসে আজি সজল সমীরণে॥
সে দিন এমনি মেঘের ঘটা রেবা নদির তীরে,
এমনি বারি ঝরেছিল শ্যামলশৈলশিরে।
মালবিকা অনিমিখে চেয়ে ছিল পথের দিকে,
সেই চাহনি এল ভেসে কালো মেঘের ছায়ার সনে॥

প্রকৃতি: অনাবৃষ্টি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝ্খানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
অসীম কালের যে হিল্লোলে জোয়ার-ভাঁটায় ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে,
ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে,
ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
কান পেতেছি, চোখ মেলেছি, ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥

প্রেম: তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

1 comments
তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে |
আমায় শুধু ক্ষণেক-তরে |
আজি হাতে আমার যা-কিছু কাজ আছে
আমি সাঙ্গ করব পরে |
না চাহিলে তোমার মুখপানে
হৃদয় আমার বিরাম নাহি জানে,
কাজের মাঝে ঘুরে বেড়াই যত
ফিরি কূলহারা সাগরে ।।
বসন্ত আজ উচ্ছাসে বিলাসে
এল আমার বাতায়নে |
অলস ভ্রমর গুঞ্জরিয়া আসে
ফেরে কুঞ্জের প্রাঙ্গনে |
আজকে শুধু একান্তে আসীন
চোখে চোখে চেয়ে থাকার দিন,
আজকে জীবন-সমর্পণের গান
গাব নীরব অবসরে ।।
২৯ চৈত্র ১৩১৮ শিলাইদহ

প্রেম: সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায় বিদেশী নায়ে,
তাহারি রাগিণী লাগিল গায়ে॥
সে সুর বাহিয়া ভেসে আসে কার সুদূর বিরহবিধুর হিয়ার
অজানা বেদনা,সাগরবেলার অধীর বায়ে
বনের ছায়ে॥
তারি গুঞ্জন লাগিল গায়ে॥


তাই শুনে আজি বিজন প্রবাসে হৃদয়মাঝে
শরত‍‌শিশিরে ভিজে ভৈরবী নীরবে বাজে।
ছবি মনে আসে আলোতে ও গীতে - যেন জনহীন নদীপথটিতে
কে চলেছে জলে কলস ভরিতে অলস পায়ে
বনের ছায়ে॥
তাহারি আভাস লাগিল গায়ে ॥

প্রেম: দিন পরে যায় দিন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
দিন পরে যায় দিন, বসি পথপাশে
গান পরে গাই গান বসন্তবাতাসে॥

ফুরাতে চায় না বেলা, তাই সুর গেঁথে খেলা
রাগিণীর মরীচিকা স্বপ্নের আভাসে॥

দিন পরে যায় দিন, নাই তব দেখা।
গান পরে গাই গান, রই বসে একা।
সুর থেমে যায় পাছে তাই নাহি আস কাছে
ভালোবাসা ব্যথা দেয় যারে ভালোবাসে॥

স্বদেশ:সাধন কি মোর আসন নেবে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
সাধন কি মোর আসন নেবে হট্টগোলের কাঁধে?
খাঁটি জিনিস হয় রে মাটি নেশার পরমাদে॥
কথায় তো শোধ হয় না দেনা, গায়ের জোরে জোড় মেলে না
গোলেমালে ফল কি ফলে জোড়াতাড়ার ছাঁদে?।
কে বলো তো বিধাতারে তাড়া দিয়ে ভোলায়?
সৃষ্টিকরের ধন কি মেলে জাদুকরের ঝোলায়?
মস্ত-বড়োর লোভে শেষে মস্ত ফাঁকি জোটে এসে,
ব্যস্ত-আশা জড়িয়ে পড়ে সর্বনাশার ফাঁদে॥

স্বদেশ:বিধির বাঁধন কাটবে তুমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান
তুমি কি এমন শক্তিমান!
আমাদের ভাঙাগড়া তোমার হাতে এমন অভিমান
তোমাদের এমনি অভিমান॥
চিরদিন টানবে পিছে, চিরদিন রাখবে নীচে
এত বল নাই রে তোমার, সবে না সেই টান॥
শাসনে যতই ঘেরো আছে বল দুর্বলেরও,
হও-না যতই বড়ো আছেন ভগবান।
আমাদের শক্তি মেরে তোরাও বাঁচবি নে রে,
বোঝা তোর ভারী হলেই ডুববে তরীখান।

স্বদেশ:ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে ততই বাঁধন টুটবে,
মোদের ততই বাঁধন টুটবে।
ওদের যতই আঁখি রক্ত হবে মোদের আঁখি ফুটবে,
ততই মোদের আঁখি ফুটবে॥
আজকে যে তোর কাজ করা চাই, স্বপ্ন দেখার সময় তো নাই
এখন ওরা যতই গর্জাবে, ভাই তন্দ্রা ততই ছুটবে,
মোদের তন্দ্রা ততই ছুটবে॥
ওরা ভাঙতে যতই চাবে জোরে গড়বে ততই দ্বিগুণ করে,
তোরা ভরসা না ছাড়িস কভু, জেগে আছেন জগত্‍‌-প্রভু
ওরা ধর্ম যতই দলবে ততই ধুলায় ধ্বজা লুটবে,
ওদের ধুলায় ধ্বজা লুটবে॥

স্বদেশ:ওরে, নূতন যুগের ভোরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ওরে, নূতন যুগের ভোরে
দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে॥
কী রবে আর কী রবে না, কী হবে আর কী হবে না
ওরে হিসাবি,
এ সংশয়ের মাঝে কি তোর ভাবনা মিশাবি?।
যেমন করে ঝর্না নামে দুর্গম পর্বতে
নির্ভাবনায় ঝাঁপ দিয়ে পড় অজাজিতের পথে।
জাগবে ততই শক্তি যতই হানবে তোরে মানা,
অজানাকে বশ ক’রে তুই করবি আপন জানা।
চলায় চলায় বাজবে জয়ের ভেরী—
পায়ের বেগেই পথ কেটে যায়, করিস নে আর দেরি॥

স্বদেশ:ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো।
একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো॥
দুন্দুভিতে হল রে কার আঘাত শুরু,
বুকের মধ্যে উঠল বেজে গুরুগুরু—
পালায় ছুটে সুপ্তিরাতের স্বপ্নে-দেখা মন্দ ভালো॥
নিরুদ্দেশের পথিক আমায় ডাক দিলে কি—
দেখতে তোমায় না যদি পাই নাই-বা দেখি।
ভিতর থেকে ঘুচিয়ে দিলে চাওয়া পাওয়া,
ভাব্‌নাতে মোর লাগিয়ে দিলে ঝড়ের হাওয়া
বজ্রশিখায় এক পলকে মিলিয়ে দিলে সাদা কালো॥

স্বদেশ: চলো যাই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
চলো যাই, চলো, যাই চলো, যাই
চলো পদে পদে সত্যের ছন্দে
চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে!
চলো মুক্তিপথে,
চলো বিঘ্নবিপদজয়ী মনোরথে
করো ছিন্ন, করো ছিন্ন, করো ছিন্ন
স্বপ্নকুহক করো ছিন্ন।
থেকো না জড়িত অবরুদ্ধ
জড়তার জর্জর বন্ধে।
বলো জয় বলো, জয় বলো, জয়
মুক্তির জয় বলো ভাই॥


চলো দুর্গমদূরপথযাত্রী চলো দিবারাত্রি,
করো জয়যাত্রা,
চলো বহি নির্ভয় বীর্যের বার্তা,
বলো জয় বলো, জয় বলো, জয়
সত্যের জয় বলো ভাই॥


দুর করো সংশয়শঙ্কার ভার,
যাও চলি তিমিরদিগন্তের পার।
কেন যায় দিন হায় দুশ্চিন্তার দ্বন্দ্বে
চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে।
চলো জ্যোতির্লোকে জাগ্রত চোখে


বলো জয় বলো, জয় বলো, জয়
বলো নির্মল জ্যোতির জয় বলো ভাই॥
হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,
যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ।
চলো অভয় অমৃতময় লোকে, অজর অশোকে,
বলো জয় বলো, জয় বলো, জয়
অমৃতের জয় বলো ভাই॥

স্বদেশ: আজি এ ভারত লজ্জিত হে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আজি এ ভারত লজ্জিত হে,
হীনতাপঙ্কে মজ্জিত হে॥
নাহি পৌরুষ, নাহি বিচারণা, কঠিন তপস্যা, সত্যসাধনা
অন্তরে বাহিরে ধর্মে কর্মে সকলই ব্রহ্মবিবর্জিত হে॥
ধিক্‌কৃত লাঞ্ছিত পৃথ’পরে, ধূলিবিলুন্ঠিত সুপ্তিভরে
রুদ্র, তোমার নিদারুণ বজ্রে করো তারে সহসা তর্জিত হে॥
পর্বতে প্রান্তরে নগরে গ্রামে জাগ্রত ভারত ব্রহ্মের নামে,
পুণ্যে বীর্যে অভয়ে অমৃতে হইবে পলকে সজ্জিত হে॥

স্বদেশ: জননীর দ্বারে আজি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
জননীর দ্বারে আজি ঐ শুন গো শঙ্খ বাজে।
থেকো না থেকো না, ওরে ভাই, মগন মিথ্যা কাজে॥
অর্ঘ্য ভরিয়া আনি ধরো গো পূজার থালি,
রতনপ্রদীপখানি যতনে আনো গো জ্বালি,
ভরি লয়ে দুই পাণি বহি আনো ফুলডালি,
মার আহ্বানবাণী রটাও ভুবনমাঝে॥
আজি প্রসন্ন পবনে নবীন জীবন ছুটিছে।
আজি প্রফুল্ল কুসুমে নব সুগন্ধ উঠিছে।
আজি উজ্জ্বল ভালে তোলো উন্নত মাথা,
নবসঙ্গীততালে গাও গম্ভীর গাথা,
পরো মাল্য কপালে নবপল্লব-গাঁথা,
শুভ সুন্দর কালে সাজো সাজো নব সাজে॥

স্বদেশ: রইল বলে রাখলে কারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
রইল বলে রাখলে কারে, হুকুম তোমার ফলবে কবে?
তোমার টানাটানি টিঁকবে না ভাই, রবার যেটা সেটাই রবে॥
যা খুশি তাই করতে পারো গায়ের জোরে রাখ মারো;
যাঁর গায়ে সব ব্যথা বাজে তিনি যা সন সেটাই সবে।
অনেক তোমার টাকাকড়ি, অনেক দড়া অনেক দড়ি,
অনেক অশ্ব অনেক করী— অনেক তোমার আছে ভবে।
ভাবছ হবে তুমিই যা চাও, জগত্‍‌টাকে তুমিই নাচাও,
দেখবে হঠাত্‍‌ নয়ন খুলে হয় না যেটা সেটাও হবে।

স্বদেশ: এ ভারতে রাখো নিত্য, প্রভু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
এ ভারতে রাখো নিত্য, প্রভু, তব শুভ আশীর্বাদ
তোমার অভয়, তোমার অজিত অমৃত বাণী,
তোমার স্থির অমর আশা॥
অনির্বাণ ধর্ম আলো সবার ঊর্ধ্বে জ্বালো জ্বালো,
সঙ্কটে দুর্দিনে হে,
রাখো তারে অরণ্যে তোমারই পথে॥
বক্ষে বাঁধি দাও তার বর্ম তব নির্বিদার,
নিঃশঙ্কে যেন সঞ্চরে নির্ভীক।
পাপের নিরখি জয় নিষ্ঠা তবুও রয়
থাকে তব চরণে অটল বিশ্বাসে॥

স্বদেশ: আমরা পথে পথে যাব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমরা পথে পথে যাব সারে সারে,
তোমার নাম গেয়ে ফিরিব দ্বারে দ্বারে॥
বলব ‘জননীকে কে দিবি দান,
কে দিবি ধন তোরা কে দিবি প্রাণ’
‘তোদের মা ডেকেছে’ কব বারে বারে॥
তোমার নামে প্রাণের সকল সুর
আপনি উঠবে বেজে সুধামধুর
মোদের হৃদয়যন্ত্রেরই তারে তারে।
বেলা গেলে শেষে তোমারই পায়ে
এনে দেব সবার পূজা কুড়ায়ে
তোমার সন্তানেরই দান ভারে ভারে॥

স্বদেশ: বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি, বারে বারে হেলিস নে ভাই!
শুধু তুই ভেবে ভেবেই হাতের লক্ষ্ণী ঠেলিস নে ভাই॥
একটা কিছু করে নে ঠিক, ভেসে ফেরা মরার অধিক—
বারেক এ দিক বারেক ও দিক, এ খেলা আর খেলিস নে ভাই॥
মেলে কিনা মেলে রতন করতে তবু হবে যতন—
না যদি হয় মনের মতন চোখের জলটা ফেলিস নে ভাই!
ভাসাতে হয় ভাসা ভেলা, করিস নে আর হেলাফেলা—
পেরিয়ে যখন যাবে বেলা তখন আঁখি মেলিস নে ভাই॥

স্বদেশ: এখন আর দেরি নয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
এখন আর দেরি নয়, ধর্ গো তোরা হাতে হাতে ধর্ গো।
আজ আপন পথে ফিরতে হবে সামনে মিলন-স্বর্গ॥
ওরে ঐ উঠেছে শঙ্খ বেজে, খুলল দুয়ার মন্দিরে যে
লগ্ন বয়ে যায় পাছে, ভাই, কোথায় পূজার অর্ঘ্য?।
এখন যার যা-কিছু আছে ঘরে সাজা পূজার থালার’পরে,
আত্মদানের উত্‍‌সধারায় মঙ্গলঘট ভর্ গো।
আজ নিতেও হবে, আজ দিতেও হবে, দেরি কেন করিস তবে
বাঁচতে যদি হয় বেঁচে নে, মর্‌তে হয় তো মর্ গো॥

স্বদেশ: ঘরে মুখ মলিন দেখে গলিস নে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ঘরে মুখ মলিন দেখে গলিস নে— ওরে ভাই,
বাইরে মুখ আঁধার দেখে টলিস নে— ওরে ভাই॥

যা তোমার আছে মনে সাধো তাই পরানপণে,
শুধু তাই দশজনারে বলিস নে— ওরে ভাই॥

একই পথ আছে ওরে, চলো সেই রাস্তা ধরে,
যে আসে তারই পিছে চলিস নে— ওরে ভাই!
থাক্‌-না আপন কাজে, যা খুশি বলুক-না যে,
তা নিয়ে গায়ের জ্বালায় জ্বলিস নে— ওরে ভাই॥

স্বদেশ: চোখের জলে ভেজাস নে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ছি ছি, চোখের জলে ভেজাস নে আর মাটি।
এবার কঠিন হয়ে থাক্‌-না ওরে, বক্ষোদুয়ার আঁটি
জোরে বক্ষোদুয়ার আঁটি॥
পরানটাকে গলিয়ে ফেলে দিস নে, রে ভাই, পথে ঢেলে
মিথ্যে অকাজে
ওরে নিয়ে তারে চলবি পারে কতই বাধা কাটি,
পথের কতই বাধা কাটি॥
দেখলে ও তোর জলের ধারা ঘরে পরে হাসবে যারা
তারা চার দিকে—
তাদের দ্বারেই গিয়ে কান্না জুড়িস, যায় না কি বুক ফাটি,
লাজে যায় না কি বুক ফাটি?।
দিনের বেলা জগত্‍‌-মাঝে সবাই যখন চলছে কাজে আপন গরবে—
তোরা পথের ধারে ব্যথা নিয়ে করিস ঘাঁটাঘাঁটি—
কেবল করিস ঘাঁটাঘাঁটি॥

স্বদেশ: মা কি তুই পরের দ্বারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
মা কি তুই পরের দ্বারে পাঠাবি তোর ঘরের ছেলে?
তারা যে করে হেলা, মারে ঢেলা, ভিক্ষাঝুলি দেখতে পেলে॥
করেছি মাথা নিচু, চলেছি যাহার পিছু
যদি বা দেয় সে কিছু অবহেলে
তবু কি এমনি করে ফিরব ওরে আপন মায়ের প্রসাদ ফেলে?।
কিছু মোর নেই ক্ষমতা সে যে ঘোর মিথ্যে কথা,
এখনো হয় নি মরণ শক্তিশেলে
আমাদের আপন শক্তি আপন ভক্তি চরণে তোর দেব মেলে॥
নেব গো মেগে-পেতে যা আছে তোর ঘরেতে,
দে গো তোর আঁচল পেতে চিরকেলে—
আমাদের সেইখেনে মান, সেইখেনে প্রাণ, সেইখেনে দিই হৃদয় ঢেলে॥

স্বদেশ: যদি তোর ভাবনা থাকে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যদি তোর ভাবনা থাকে ফিরে যা-না। তবে তুই ফিরে যা-না।
যদি তোর ভয় থাকে তো করি মানা(২)
যদি তোর ঘুম জড়িয়ে থাকে গায়ে ভুলবি যে পথ পায়ে পায়ে,
যদি তোর হাত কাঁপে তো নিবিয়ে আলো সবারে করবি কানা॥

যদি তোর ছাড়তে কিছু না চাহে মন করিস ভারী বোঝা আপন
তবে তুই সইতে কভু পারবি নে রে এ বিষম পথের টানা॥

যদি তোর আপনা হতে অকারণে সুখ সদা না জাগে মনে
তবে তুই তর্ক ক’রে সকল কথা করিবি নানাখানা॥

স্বদেশ: ওরে, তোরা নেই বা কথা বললি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ওরে, তোরা নেই বা কথা বললি,
দাঁড়িয়ে হাটের মধ্যিখানে নেই জাগালি পল্লী॥

মরিস মিথ্যে ব’কে ঝ’কে, দেখে কেবল হাসে লোকে,
নাহয় নিয়ে আপন মনের আগুন মনে মনেই জ্বললি॥

অন্তরে তোর আছে কী যে নেই রটালি নিজে নিজে,
নাহয় বাদ্যগুলো বন্ধ রেখে চুপেচাপেই চললি॥
কাজ থাকে তো কর্ গে না কাজ, লাজ থাকে তো ঘুচা গে লাজ,
ওরে, কে যে তোরে কী বলেছে নেই বা তাতে টললি॥

স্বদেশ: যে তোরে পাগল বলে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু॥

আজকে তোরে কেমন ভেবে অঙ্গে যে তোর ধুলো দেবে
কাল সে প্রাতে মালা হাতে আসবে রে তোর পিছু-পিছু॥

আজকে আপন মানের ভরে থাক্ সে বসে গদির’পরে
কালকে প্রেমে আসবে নেমে, করবে সে তার মাথা নিচু॥

Tuesday, December 22, 2009

প্রেম: মনে রবে কি না রবে আমারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই॥
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই
তাই অকারণে গান গাই॥
ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে নাকি এ খেলারই ভেলাটাই
তাই অকারণে গান গাই॥

স্বদেশ: যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা!
আমি তোমার চরণ—
মা গো, আমি তোমার চরণ করব শরণ, আর কারো ধার ধারব না মা॥
কে বলে তোর দরিদ্র ঘর, হৃদয় তোর রতনরাশি—
আমি জানি গো তার মূল্য জানি, পরের আদর কাড়ব না মা॥
মানের আশে দেশবিদেশে যে মরে সে মরুক ঘুরে—
তোমার ছেঁড়া কাঁথা আছে পাতা, ভুলতে সে যে পারব না মা!।
ধনে মানে লোকের টানে ভুলিয়ে নিতে চায় যে আমায়—
ও মা, ভয় যে জাগে শিয়র-বাগে, কারো কাছেই হারব না মা॥

স্বদেশ: সার্থক জনম আমার - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে॥

জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রানীর মতন,
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে॥

কোন্ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,
কোন্ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,
ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে॥

স্বদেশ: অয়ি ভুবনমনোমোহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা,
অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননিজননী॥

নীলসিন্ধুজলধৌতচরণতল, অনিলবিকম্পিত-শ্যামল-অঞ্চল,
অম্বরচুম্বিতভালহিমাচল, শুভ্রতুষারকিরীটিনী॥

প্রথম প্রভাত উদয় তব গগনে, প্রথম সামরব তব তপোবনে,
প্রথম প্রচারিত তব বনভবনে জ্ঞানধর্ম কত কাব্যকাহিনী।
চিরকল্যাণময়ী তুমি ধন্য, দেশবিদেশে বিতরিছ অন্ন
জাহ্নবীযমুনা বিগলিত করুণা পুণ্যপীযূষস্তন্যবাহিনী॥

স্বদেশ: আমায় বোলো না গাহিতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমায় বোলো না গাহিতে বোলো না।
এ কি শুধু হাসি খেলা, প্রমোদের মেলা, শুধু মিছেকথা ছলনা?।
এ যে নয়নের জল, হতাশের শ্বাস, কলঙ্কের কথা, দরিদ্রের আশ,
এ যে বুক-ফাটা দুখে গুমরিছে বুকে গভীর মরমবেদনা।
এ কি শুধু হাসি খেলা, প্রমোদের মেলা, শুধু মিছেকথা ছলনা?।
এসেছি কি হেথা যশের কাঙালি কথা গেঁথে গেঁথে নিতে করতালি—
মিছে কথা কয়ে, মিছে যশ লয়ে, মিছে কাজে নিশিযাপনা!
কে জাগিবে আজ, কে করিবে কাজ, কে ঘুচাতে চাহে জননীর লাজ—
কাতরে কাঁদিবে, মায়ের পায়ে দিবে সকল প্রাণের কামনা?
এ কি শুধু হাসি খেলা, প্রমোদের মেলা, শুধু মিছেকথা ছলনা?।

স্বদেশ: আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥
ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥
যখন অনাদরে চাই নি মুখে ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা
আছে ভাঙা ঘরে একলা পড়ে, দুখের বুঝি নাইকো সীমা।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি—
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল ঐ চরণের দীপ্তিরাশি!
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥
আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী—
তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥

স্বদেশ: বাংলার মাটি, বাংলার জল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান॥
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান॥
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান॥
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান॥

স্বদেশ: আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে।
কে আছ জাগিয়া পুরবে চাহিয়া,
বলো ‘উঠ উঠ’ সঘনে গভীরনিদ্রাগমনে॥
হেরো তিমিররজনী যায় ঐ, হাসে উষা নব জ্যোতির্ময়ী—
নব আনন্দে, নব জীবনে,
ফুল্ল কুসুমে, মধুর পবনে, বিহগকলকূজনে॥
হেরো আশার আলোকে জাগে শুকতারা উদয়-অচল-পথে,
কিরণকিরীটে তরুণ তপন উঠিছে অরুণরথে—
চলো যাই কাজে মানবসমাজে, চলো বাহিরিয়া জগতের মাঝে—
থেকো না অলস শয়নে, থেকো না মগন স্বপনে॥
যায় লাজ ত্রাস, আলস বিলাস কুহক মোহ যায়।
ঐ দূর হয় শোক সংশয় দুঃখ স্বপনপ্রায়।
ফেলো জীর্ণ চীর, পরো নব সাজ, আরম্ভ করো জীবনের কাজ—
সরল সবল আনন্দমনে, অমল অটল জীবনে॥

স্বদেশ: আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই!
পড়ে থাকা পিছে, মরে থাকা মিছে,
বেঁচে মরে কিবা ফল ভাই!
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই॥
প্রতি নিমেষেই যেতেছে সময়,
দিন ক্ষণ চেয়ে থাকা কিছু নয়—
‘সময় সময়’ ক’রে পাঁজি পুঁথি ধ’রে
সময় কোথা পাবি বল্ ভাই!
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই॥


পিছায়ে যে আছে তারে ডেকে নাও
নিয়ে যাও সাথে করে—
কেহ নাহি আসে, একা চলে যাও
মহত্ত্বের পথ ধরে।
পিছু হতে ডাকে মায়ার কাঁদন,
ছিঁড়ে চলে যাও মোহের বাঁধন—
সাধিতে হইবে প্রাণের সাধন,
মিছে নয়নের জল ভাই!
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই॥


চিরদিন আছি ভিখারির বেশে
জগতের পথপাশে—
যারা চলে যায় কৃপাচোখে চায়,
পদধুলা উড়ে আসে।
ধুলিশয্যা ছেড়ে ওঠো ওঠো সবে
মানবের সাথে যোগ দিতে হবে—
তা যদি না পারো চেয়ে দেখো তবে
ঐ আছে রসাতল ভাই!
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই॥

স্বদেশ: মাতৃমন্দির-পুণ্য-অঙ্গন কর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
মাতৃমন্দির-পুণ্য-অঙ্গন কর’ মহোজ্জ্বল আজ হে
বর -পুত্রসঙ্ঘ বিরাজ’ হে।
শুভ শঙ্খ বাজহ বাজ’ হে।
ঘন তিমিররাত্রির চির প্রতীক্ষা
পূর্ণ কর’, লহ’ জ্যোতিদীক্ষা,
যাত্রীদল সব সাজ’ হে।
শুভ শঙ্খ বাজহ বাজ’ হে।
বল জয় নরোত্তম, পুরুষসত্তম,
জয় তপস্বিরাজ হে।
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় হে।
এস’ বজ্রমহাসনে মাতৃ-আশীর্ভাষণে,
সকল সাধক এস’ হে, ধন্য কর’ এ দেশ হে।
সকল যোগী, সকল ত্যাগী, এস’ দুঃসহদুঃখভাগী—
এস’ দুর্জয়শক্তিসম্পদ মুক্তবন্ধ সমাজ হে।
এস’ জ্ঞানী, এস’ কর্মী নাশ’ ভারতলাজ হে।
এস’ মঙ্গল, এস’ গৌরব,
এস’ অক্ষয়পুণ্যসৌরভ,
এস’ তেজঃসূর্য উজ্জ্বল কীর্তি-অম্বর মাঝ হে
বীরধর্মে পুণ্যকর্মে বিশ্বহৃদয় রাজ’ হে।
শুভ শঙ্খ বাজহ বাজ’ হে।
জয় জয় নরোত্তম, পুরুষসত্তম,
জয় তপস্বিরাজ হে।
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় হে॥

স্বদেশ: দেশ দেশ নন্দিত করি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী
আসিল যত বীরবৃন্দ আসন তব ঘেরি।
দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?
সে কি রহিল লুপ্ত আজি সব-জন পশ্চাতে?
লউক বিশ্বকর্মভার মিলি সবার সাথে।
প্রেরণ কর’ ভৈরব তব দুর্জয় আহ্বান হে, জাগ্রত ভগবান হে॥


বিঘ্নবিপদ দুঃখদহন তুচ্ছ করিল যারা
মৃত্যুগহন পার হইল, টুটিল মোহকারা।
দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?
নিশ্চল নিবীর্যবাহু কর্মকীর্তিহীনে
ব্যর্থশক্তি নিরানন্দ জীবনধনদীনে
প্রাণ দাও, প্রাণ দাও, দাও দাও প্রাণ হে, জাগ্রত ভগবান হে॥


নূতনযুগসূর্য উঠিল, ছুটিল তিমিররাত্রি,
তব মন্দির-অঙ্গন ভরি মিলিল সকল যাত্রী।
দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?
গতগৌরব, হৃত-আসন, নতমস্তক লাজে—
গ্লানি তার মোচন কর’ নরসমাজমাঝে।
স্থান দাও, স্থান দাও, দাও দাও স্থান হে, জাগ্রত ভগবান হে॥


জনগণপথ তব জয়রথচক্রমুখর আজি,
স্পন্দিত করি দিগ্‌দিগন্ত উঠিল শঙ্খ বাজি।
দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?
দৈন্যজীর্ণ কক্ষ তার, মলিন শীর্ণ আশা,
ত্রাসরুদ্ধ চিত্ত তার, নাহি নাহি ভাষা।
কোটিমৌনকণ্ঠপূর্ণ বাণী কর’ দান হে, জাগ্রত ভগবান হে॥


যারা তব শক্তি লভিল নিজ অন্তরমাঝে
বর্জিল ভয়, অর্জিল জয়, সার্থক হল কাজে।
দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?
আত্ম-অবিশ্বাস তার নাশ’ কঠিন ঘাতে,
পুঞ্জিত অবসাদভার হান’ অশনিপাতে।
ছায়াভয়চকিতমূঢ় করহ পরিত্রাণ হে, জাগ্রত ভগবান হে॥

স্বদেশ: হে মোর চিত্ত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে—
উদার ছন্দে, পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
ধ্যানগম্ভীর এই-যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর,
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে—
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে॥


কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন—
শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।
পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার,
দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে—
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে॥


এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।
মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা
সবার-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে—
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে॥

স্বদেশ: জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।


অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।


পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।


ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।


রাত্রি প্রভাতিল, উদিল রবিচ্ছবি পূর্ব-উদয়গিরিভালে –
গাহে বিহঙ্গম, পূণ্য সমীরণ নবজীবনরস ঢালে।
তব করুণারুণরাগে নিদ্রিত ভারত জাগে
তব চরণে নত মাথা।
জয় জয় জয় হে জয় রাজেশ্বর ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

স্বদেশ: আমাদের যাত্রা হল শুরু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমাদের যাত্রা হল শুরু এখন, ওগো কর্ণধার।
তোমারে করি নমস্কার।
এখন বাতাস ছুটুক, তুফান উঠুক, ফিরব না গো আর—
তোমারে করি নমস্কার॥
আমরা দিয়ে তোমার জয়ধ্বনি বিপদ বাধা নাহি গণি
ওগো কর্ণধার।
এখন মাভৈঃ বলি ভাসাই তরী, দাও গো করি পার—
তোমারে করি নমস্কার॥
এখন রইল যাত্রা আপন ঘরে চাব না পথ তাদের তরে
ওগো কর্ণধার।
যখন তোমার সময় এল কাছে তখন কে বা কার—
তোমারে করি নমস্কার।
মোদের কেবা আপন, কে বা অপর, কোথায় বাহির, কোথা বা ঘর
ওগো কর্ণধার।
চেয়ে তোমার মুখে মনের সুখে নেব সকল ভার—
তোমারে করি নমস্কার॥
আমরা নিয়েছি দাঁড়, তুলেছি পাল, তুমি এখন ধরো গো হাল
ওগো কর্ণধার।
মোদের মরণ বাঁচন ঢেউয়ের নাচন, ভাবনা কী বা তার—
তোমারে করি নমস্কার।
আমরা সহায় খুঁজে পরের দ্বারে ফিরব না আর বারে বারে
ওগো কর্ণধার।
কেবল তুমিই আছ আমরা আছি এই জেনেছি সার—
তোমারে করি নমস্কার॥

স্বদেশ: নাই নাই ভয়, হবে হবে জয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার—
জানি জানি তোর বন্ধনডোর ছিঁড়ে যাবে বারে বার॥
খনে খনে তুই হারায়ে আপনা সুপ্তিনিশীথ করিস যাপনা—
বারে বারে তোরে ফিরে পেতে হবে বিশ্বের অধিকার॥
স্থলে জলে তোর আছে আহ্বান, আহ্বান লোকালয়ে—
চিরদিন তুই গাহিবি যে গান সুখে দুখে লাজে ভয়ে।
ফুলপল্লব নদীনির্ঝর সুরে সুরে তোর মিলাইবে স্বর—
ছন্দে যে তোর স্পন্দিত হবে আলোক অন্ধকার॥

স্বদেশ: সঙ্কোচের বিহ্বলতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান,
সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।
মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।
দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো,
নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো।
মুক্ত করো ভয়, নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।
ধর্ম যবে শঙ্খরবে করিবে আহ্বান
নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ।
মুক্ত করো ভয়, দুরূহ কাজে নিজেরই দিয়ো কঠিন পরিচয়॥

স্বদেশ: আমরা সবাই রাজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান,
মোদের খাটো ক'রে রাখে নি কেউ কোনো অসত্যে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?
আমরা চলব আপন মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে,
মোরা মরব না কেউ বিফলতার বিষম আবর্তে---
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।

স্বদেশ: আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।
ঘরের হয়ে পরের মতন ভাই ছেড়ে ভাই ক’দিন থাকে?।
প্রাণের মাঝে থেকে থেকে ‘আয়’ ব’লে ঐ ডেকেছে কে,
সেই গভীর স্বরে উদাস করে— আর কে কারে ধরে রাখে?।
যেথায় থাকি যে যেখানে বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে,
সেই প্রাণের টানে টেনে আনে— সেই প্রাণের বেদন জানে না কে?।
মান অপমান গেছে ঘুচে, নয়নের জল গেছে মুছে—
সেই নবীন আশে হৃদয় ভাসে ভাইয়ের পাশে ভাইকে দেখে॥
কত দিনের সাধনফলে মিলেছি আজ দলে দলে—
আজ ঘরের ছেলে সবাই মিলে দেখা দিয়ে আয় রে মাকে॥

স্বদেশ: আপনি অবশ হলি, তবে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আপনি অবশ হলি, তবে বল দিবি তুই কারে?
উঠে দাঁড়া, উঠে দাঁড়া, ভেঙে পড়িস না রে॥
করিস নে লাজ, করিস নে ভয়, আপনাকে তুই করে নে জয়—
সবাই তখন সাড়া দেবে ডাক দিবি তুই যারে॥
বাহির যদি হলি পথে ফিরিস নে আর কোনোমতে,
থেকে থেকে পিছন-পানে চাস নে বারে বারে।
নেই যে রে ভয় ত্রিভুবনে, ভয় শুধু তোর নিজের মনে—
অভয়চরণ শরণ ক’রে বাহির হয়ে যা রে॥

স্বদেশ: আমি ভয় করব না - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমি ভয় করব না ভয় করব না।
দু বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না॥
তরীখানা বাইতে গেলে মাঝে মাঝে তুফান মেলে—
তাই ব’লে হাল ছেড়ে দিয়ে ধরব না, কান্নাকাটি ধরব না॥
শক্ত যা তাই সাধতে হবে, মাথা তুলে রইব ভবে—
সহজ পথে চলব ভেবে পড়ব না, পাঁকের ’পরে পড়ব না॥
ধর্ম আমার মাথায় রেখে চলব সিধে রাস্তা দেখে—
বিপদ যদি এসে পড়ে সরব না, ঘরের কোণে সরব না॥

স্বদেশ: নিশিদিন ভরসা রাখিস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে।
যদি পণ করে থাকিস সে পণ তোমার রবেই রবে।
ওরে মন, হবেই হবে॥
পাষাণসমান আছে পড়ে, প্রাণ পেয়ে সে উঠবে ওরে,
আছে যারা বোবার মতন তারাও কথা কবেই কবে॥
সময় হল, সময় হল— যে যার আপন বোঝা তোলো রে—
দুঃখ যদি মাথায় ধরিস সে দুঃখ তোর সবেই সবে।
ঘণ্টা যখন উঠবে বেজে দেখবি সবাই আসবে সেজে—
এক সাথে সব যাত্রী যত একই রাস্তা লবেই লবে॥

স্বদেশ: এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, ‘জয় মা’ ব’লে ভাসা তরী॥
ওরে রে ওরে মাঝি, কোথায় মাঝি, প্রাণপণে, ভাই, ডাক দে আজি—
তোরা সবাই মিলে বৈঠা নে রে, খুলে ফেল্ সব দড়াদড়ি॥
দিনে দিনে বাড়ল দেনা, ও ভাই, করলি নে কেউ বেচা কেনা—
হাতে নাই রে কড়া কড়ি।
ঘাটে বাঁধা দিন গেল রে, মুখ দেখাবি কেমন ক’রে—
ওরে, দে খুলে দে, পাল তুলে দে, যা হয় হবে বাঁচি মরি॥

স্বদেশ: তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে,
তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না।
ও তোর আশালতা পড়বে ছিঁড়ে,
হয়তো রে ফল ফলবে না॥
আসবে পথে আঁধার নেমে, তাই ব’লেই কি রইবি থেমে—
ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি,
হয়তো বাতি জ্বলবে না॥
শুনে তোমার মুখের বাণী আসবে ঘিরে বনের প্রাণী—
হয়তো তোমার আপন ঘরে
পাষাণ হিয়া গলবে না।
বদ্ধ দুয়ার দেখলি ব’লে অমনি কি তুই আসবি চলে—
তোরে বারে বারে ঠেলতে হবে,
হয়তো দুয়ার টলবে না॥

স্বদেশ: যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে॥
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়—
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে॥
যদি সবাই ফিরে যায় , ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে॥
যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে—
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে॥

স্বদেশ: ও আমার দেশের মাটি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা॥
তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার ঐ শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা॥
ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে।
তোমার ’পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে।
তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,
তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,
তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা॥
ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা—
তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা!
আমার জনম গেল বৃথা কাজে,
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে—
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা॥
মূল গান : আমার সোনার গৌর কেনে কেন্দে এলো নরহরি ।

আমি কোথায় পাব তারে - গগন হরকরা

0 comments
আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ আছে যে রে |
হায়রে সেই মানুষে
তার উদ্দেশে
দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে ||
লাগি সেই হৃদয়-শশী
সদা প্রাণ রয় উদাসী,
পেলে মন হ'ত খুশি
দেখতাম নয়ন ভ'রে ||
আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে, নিভাই কেমন ক'রে
মরি হায় হায় রে |
ও তোর বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে,
তবে দেখনা তোরা হৃদয় চিরে |
দিব তার তুলনা কী
তার প্রেমে জগৎ সুখী,
হেরিলে জুড়ায় আঁখি,
সামান্যে কি দেখতে পারে তারে ||
তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে |
মরি হায় হায় রে |
ওসে না জানি কি কুহক জানে অলক্ষ্যে মন চুরি করে |
কুল মান সব গেল রে
তবু না পেলাম তারে,
প্রেমের নেশা নাই অন্তরে |
তাই তো মোরে দেয় না দেখা সে রে |
ও তার বসত কোথায়
না জেনে তায়
গগন ভেবে মরে |
মরি হায়, হায় রে |
ও সে মানসের উদ্দেশ জানিস যদি
( কৃপা করে )
( আমার সুহৃৎ হয়ে )
( ব্যথার ব্যথিত হয়ে )
( আমায় বলে দে রে )
নেওয়া হয়েছে মিলনসাগর থেকে

স্বদেশ: আমার সোনার বাংলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥


কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥


তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥


ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥


ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥
গগন হরকরা রচিত "আমি কোথায় পাবো তারে" থেকে সুর নকলকৃত প্রথম ১০ লাইন যা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
কবিতাটির রচনাকাল :

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত মোট ১২ বছর জমিদারীর কাজে পূর্ব বঙ্গের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে ছিলেন । কবিতাটি এ সময়ের রচিত বলে ধারণা করা হয় ।
কবিতার প্রথম প্রকাশ :
বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১৯০৫ সালে প্রথম কবিতাটি প্রকাশিত হয় ।
গানটির রচনাকাল :
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে বৃটিশ সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয় । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৬ সালে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী চেতনা হতে ।
গানের সুর :
গানটির সুরকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত মোট ১২ বছর জমিদারীর কাজে পূর্ব বঙ্গের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে ছিলেন । কুষ্টিয়া জেলার বাউল শিল্পী গগন হরকরার "আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে" গানের সুরে তিনি এ গানের সুর করেন ।
প্রথমবার গাওয়া হয় :
১৯০৭ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক গণ সমাবেশে প্রথম এই গান গাওয়া হয়।
প্রথম রেকর্ড :
শিল্পী গোপালচন্দ্র সেনের কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করা হয় ।
আরো কিছু তথ্য :এই গানটিতে মোট ২৫ টি চরণ আছে । এর মধ্যে প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় । গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান গ্রন্থের অর্ন্তগত । বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান তার পরিচালিত জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০) চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয় ।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত :
১৯৭১ সালের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। ৩ মার্চ তারিখে পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ইশতেহারে 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
প্রথমবার সরকারীভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় :
১৯৭১ সালের এপ্রিল ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
একটি অর্জন :ব্রিটেনের জনপ্রিয় দৈনিক গার্ডিয়ান বেইজিং অলিম্পিকে পৃথিবীর ২০৫ টি দেশের জাতীয় সংগীতের বিবেচনায় সেরা ১০ টি জাতীয় সংগীত নির্বাচন করে । এতে , আমাদের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। প্রথম হয় উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত । তৃতীয় হয় তাজাকিস্তানের জাতীয় সংগীত।
ডাউনলোড লিংক :
যন্ত্রসংগীত-১
যন্ত্রসংগীত-২
যন্ত্রসংগীত-৩
গান(২৫ চরন-সর্ম্পূণ গান)
লিখেছেন : হোসাইন 

আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।
খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত।।
কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,
খুশি রই আপন মনে- বাতাস বহে সুমন্দ।
সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,
শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।
ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,
ততখন রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ।।

পূজা: তোমার সোনার থালায় সাজাব আজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
তোমার সোনার থালায় সাজাব আজ
দুখের অশ্রুধার।
জননী গো, গাঁথব তোমার
গলার মুক্তাহার।
চন্দ্র সূর্য পায়ের কাছে
মালা হয়ে জড়িয়ে আছে,
তোমার বুকে শোভা পাবে আমার
দুখের অলঙ্কার॥


ধন ধান্য তোমারি ধন,
কী করবে তা কও।
দিতে চাও তো দিয়ো আমায়,
নিতে চাও তো লও।
দুঃখ আমার ঘরের জিনিস,
খাঁটি রতন তুই তো চিনিস--
তোর প্রসাদ দিয়ে তারে কিনিস
এ মোর অহংকার॥
রচনাকাল: ১৩১৫

পূজা: বিপদে মোরে রক্ষা করো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।


আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে
তোমারি মুখ লইব চিনে,
দুখের রাতে নিখিল ধরা
যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।

পূজা: যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যে রাতে মোর দুয়ারগুলি
ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই তো তুমি এলে
আমার ঘরে ।
সব যে হয়ে গেল কালো,
নিবে গেল দীপের আলো,
আকাশপানে হাত বাড়ালেম
কাহার তরে ।


অন্ধকারে রইনু পড়ে
স্বপন মানি ।
ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা
তাই কি জানি ।
সকালবেলায় চেয়ে দেখি
দাঁড়িয়ে আছ তুমি এ কি
ঘরভরা মোর শূন্যতারি
বুকের পরে ।

পূজা: সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে।
যাক-না গো সুখ জ্বলে॥
থাক-না পায়ের তলার মাটি, তুমি তখন ধরবে আঁটি—
তুলে নিয়ে দুলাবে ওই বাহুদোলার দোলে॥
যেখানে ঘর বাঁধব আমি আসে আসুক বান—
তুমি যদি ভাসাও মোরে চাই নে পরিত্রাণ।
হার মেনেছি, মিটেছে ভয়— তোমার জয় তো আমারি জয়
ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে॥

পূজা: আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

1 comments
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য কর দহন-দানে॥

আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে॥

আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব-পানে॥

পূজা: যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি।
ঝড় এসেছে, ওরে, এবার ঝড়কে পেলেম সাথি॥
আকাশকোণে সর্বনেশে ক্ষণে ক্ষণে উঠছে হেসে,
প্রলয় আমার কেশে বেশে করছে মাতামাতি॥
যে পথ দিয়ে যেতেছিলেম ভুলিয়ে দিল তারে,
আবার কোথা চলতে হবে গভীর অন্ধকারে।
বুঝি বা এই বজ্ররবে নূতন পথের বার্তা কবে—
কোন্ পুরীতে গিয়ে তবে প্রভাত হবে রাতি॥

পূজা: প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর—
তুমি দেহো মোরে কথা, তুমি দেহো মোরে সুর—
তুমি যদি থাক মনে বিকচ কমলাসনে,
তুমি যদি কর প্রাণ তব প্রেমে পরিপূর,
প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর॥
তুমি শোন যদি গান আমার সমুখে থাকি,
সুধা যদি করে দান তোমার উদার আঁখি,
তুমি যদি দুখ’পরে রাখ কর স্নেহভরে,
তুমি যদি সুখ হতে দম্ভ করহ দূর,
প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর॥

পূজা: ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু॥

এই-যে হিয়া থরোথরো কাঁপে আজি এমনতরো
এই বেদনা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু॥

এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু,
পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।
দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়,
সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু॥

পূজা: বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, গগন অন্ধকার,
কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার॥


নয়নে ঘুম নিল কেড়ে, উঠে বসি শয়ন ছেড়ে—
মেলে আঁখি চেয়ে থাকি, পাই নে দেখা তার॥


গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া প্রাণ উঠিল পুরে,
জানি নে কোন্ বিপুল বাণী বাজে ব্যাকুল সুরে।
কোন্ বেদনায় বুঝি না রে হৃদয় ভরা অশ্রুভারে,
পরিয়ে দিতে চাই কাহারে আপন কণ্ঠহার॥

পূজা: অন্তর মম বিকশিত করো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তরতর হে।
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,
সুন্দর কর হে।
জাগ্রত করো, উদ্যত করো,
নির্ভয় করো হে।
মঙ্গল করো, নরলস নিঃসংশয় করো হে।
অন্তর মম বিকশিত করো,
অন্তরতর হে।
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
মুক্ত করো হে বন্ধ,
সঞ্চার করো সকল মর্মে
শান্ত তোমার ছন্দ।
চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে,
নন্দিত করো, নন্দিত করো,
নন্দিত করো হে।
অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তরতর হে।

পূজা: প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।
তব ভুবনে তব ভবনে
মোরে আরো আরো আরো দাও স্থান॥
আরো আলো আরো আলো
এই নয়নে, প্রভু, ঢালো।
সুরে সুরে বাঁশি পুরে
তুমি আরো আরো আরো দাও তান॥
আরো বেদনা আরো বেদনা
প্রভু, দাও মোরে আরো চেতনা।
দ্বার ছুটায়ে বাধা টুটায়ে
মোরে করো ত্রাণ মোরে করো ত্রাণ।
আরো প্রেমে আরো প্রেমে
মোর আমি ডুবে যাক নেমে।
সুধাধারে আপনারে
তুমি আরো আরো আরো করো দান॥

পূজা: জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।
সকল মাধুরী লুকায়ে যায়, গীতসুধারসে এসো॥

কর্ম যখন প্রবল-আকার গরজি উঠিয়া ঢাকে চারি ধার
হৃদয়প্রান্তে, হে জীবননাথ, শান্ত চরণে এসো॥

আপনারে যবে করিয়া কৃপণ কোণে পড়ে থাকে দীনহীন মন
দুয়ার খুলিয়া, হে উদার নাথ, রাজসমারোহে এসো।
বাসনা যখন বিপুল ধুলায় অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়,
ওহে পবিত্র, ওহে অনিদ্র, রুদ্র আলোকে এসো॥

পূজা: আজি যত তারা তব আকাশে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আজি যত তারা তব আকাশে
সবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে॥

নিখিল তোমার এসেছে ছুটিয়া, মোর মাঝে আজি পড়েছে টুটিয়া হে,
তব নিকুঞ্জের মঞ্জরী যত আমারি অঙ্গে বিকাশে॥

দিকে দিগন্তে যত আনন্দ লভিয়াছে এক গভীর গন্ধ,
আমার চিত্তে মিলি একত্রে তোমার মন্দিরে উছাসে।
আজি কোনোখানে কারেও না জানি,
শুনিতে না পাই আজি কারো বাণী হে,
নিখিল নিশ্বাস আজি এ বক্ষে বাঁশরির সুরে বিলাসে॥

পূজা: আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও,
কে আমারে কী-যে বলে ভোলাও ভোলাও।।
ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে,
বাঁশির ডাকে সকল বাধন খোলাও।।
মনে পড়ে, কত-না দিন রাতি
আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথি।
আজকে তুমি তেমনি করে সামনে তোমার রাখো ধরে,
আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ তোলাও।।

পূজা: আমারে তুমি অশেষ করেছ - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
আমারে তুমি অশেষ করেছ
এমনি লীলা তব ।
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ
জীবন নব নব ।
কত যে গিরি কত যে নদীতীরে
বেড়ালে বহি ছোট এ বাঁশিটিরে,
কত যে তান বাজালে ফিরে ফিরে
কাহারে তাহা কব ।


তোমারি এই অমৃতপরশে
আমার হিয়াখানি
হারাল সীমা বিপুল হরষে
উথলি উঠে বাণী ।
আমার শুধু একটি মুঠি ভরি
দিতেছ দান দিবসবিভাবরী,
হল না সারা কত না যুগ ধরি
কেবলি আমি লব ।
শান্তিনিকেতন ৭ বৈশাখ ১৩১৯
রবীন্দ্র রচনাবলী (পশ্চিমবঙ্গ সরকার শতবার্ষিকী সং) খণ্ড ২, পৃ ৩৩৫ (গীতিমাল্য ২৩) থেকে সংগৃহীত ।
গীতবিতানে যতিচিহ্ণ এবং পঙ্‌ক্তিবিন্যাসে সামান্য তফাত আছে।
Thou hast made me endless,
such is thy pleasure.
This frail vessel thou emptiest again and again,
and fillest it ever with fresh life.

This little flute of a reed thou hast carried over hills and dales,
and hast breathed through it melodies eternally new.
At the immortal touch of thy hands my little heart loses its limits in joy
and gives birth to utterance ineffable.
Thy infinite gifts come to me
only on these very small hands of mine.
Ages pass, and still thou pourest,
and still there is room to fill.

পূজা: শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয় - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়,
মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো॥


সারা পথের ক্লান্তি আমার সারা দিনের তৃষা
কেমন করে মেটাব যে খুঁজে না পাই দিশা—
এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায় সেই কথা বলিয়ো॥


হৃদয় আমার চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়,
বয়ে বয়ে বেড়ায় সে তার যা-কিছু সঞ্চয়।
হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো, দাও গো আমার হাতে—
ধরব তারে, ভরব তারে, রাখব তারে সাথে,
একলা পথের চলা আমার করব রমণীয়॥

পূজা: গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে।
ওগো পথিক তুমি এসে বসবে বারে বারে।।


ঐ যে তোমার ভোরের পাখি নিত্য করে ডাকাডাকি,
অরুণ-আলোর খেয়ায় যখন এস ঘাটের পারে,
মোর প্রভাতীর গানখানিতে দাঁড়াও আমার দ্বারে।।


আজ সকালে মেঘের ছায়া লুটিয়ে পড়ে বনে,
জল ভরেছে ঐ গগনের নীল নয়নের কোণে।
আজকে এলে নতুন বেশে তালের বনের মাঠের শেষে,
অমনি চলে যেয়ো নাকো গোপনসঞ্চারে।
দাঁড়িয়ো আমার মেঘলা গানের বাদল-অন্ধকারে।।

পূজা: আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান,
দিয়ো তোমার জগত্‍‌-সভায় এইটুকু মোর স্থান॥

আমি তোমার ভুবন-মাঝে লাগি নি, নাথ, কোনো কাজে—
শুধু কেবল সুরে বাজে অকাজের এই প্রাণ॥

নিশায় নীরব দেবালয়ে তোমার আরাধন,
তখন মোরে আদেশ কোরো গাইতে হে রাজন।
ভোরে যখন আকাশ জুড়ে বাজবে বীণা সোনার সুরে—
আমি যেন না রই দূরে, এই দিয়ো মোর মান॥

পূজা: হেথা যে গান গাইতে আসা আমার - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
হেথা যে গান গাইতে আসা আমার
হয় নি সে গান গাওয়া-
আজও কেবলই সুর সাধা, আমার
কেবল গাইতে চাওয়া।


আমার লাগে নাই সে সুর, আমার
বাধেঁ নাই সে কথা-
শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে
গানের ব্যাকুলতা।
আজও ফোটে নাই সে ফুল, শুধু
বহেছে এক হাওয়া।


আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি
শুনি নাই তার বাণী-
কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার
পায়ের ধ্বনিখানি।
আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন
করে আসা যাওয়া।


শুধু আসন পাতা হল আমার
সারাটি দিন ধরে-
ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে
ডাকব কেমন করে।
আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে
হয় নি আমার পাওয়া।
গীতাঞ্জলি

পূজা: জাগ জাগ রে জাগ সঙ্গীত - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
জাগ' জাগ' রে জাগ' সঙ্গীত---চিত্ত অম্ব্র কর তরঙ্গিত
নিবিড়নন্দিত প্রেমকম্পিত হৃদয়কুঞ্জবিতানে।।
মুক্তবন্ধন সপ্তসুর তব করুক বিশ্ববিহার,
সূর্যশশিনক্ষত্রলোকে করুক হর্ষ প্রচার।
তানে তানে প্রাণে প্রাণে গাঁথ' নন্দনহার।
পূর্ণ কর' রে গগন-অঙ্গন তাঁর বন্দনগানে।।

পূজা: রাজপুরীতে বাজায় বাঁশি বেলাশেষের তান - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
রাজপুরীতে বাজায় বাঁশি বেলাশেষের তান।
পথে চলি, শুধায় পথিক 'কী নিলি তোর দান'।।
দেখাব যে সবার কাছে এমন আমার কী-বা আছে,
সঙ্গে আমার আছে শুধু এই কখানি গান।।
ঘরে আমার রাখতে যে হয় বহু লোকের মন---
অনেক বাঁশি, অনেক কাঁসি, অনেক আয়োজন।
বঁধুর কাছে আসার বেলায় গানটি শুধু নিলেম গলায়,
তারি গলার মাল্য ক'রে করব মূল্যবান।।

পূজা: দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে---
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে।।
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী---
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে।।
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে,
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে।।

পূজা: কেন তোমরা আমায় ডাকো - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
কেন তোমরা আমায় ডাকো, আমার মন না মানে।
পাই নে সময় গানে গানে।।
পথ আমারে শুধায় লোকে, পথ কি আমার পড়ে চোখে,
চলি যে কোন্‌ দিকের পানে গানে গানে।।
দাও না ছুটি, ধর ত্রুটি, নিই নে কানে।
মন ভেসে যায় গানে গানে।
আজ যে কুসুম-ফোটার বেলা, আকাশে আজ রঙের মেলা,
সকল দিকেই আমায় টানে গানে গানে।।

পূজা: তোমার কাছে এ বর মাগি মরণ হতে যেন জাগি - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
তোমার কাছে এ বর মাগি, মরণ হতে যেন জাগি
গানের সুরে।।
যেমনি নয়ন মেলি যেন মাতার স্তন্যসুধা-হেন
নবীন জীবনে দেয় গো পুরে গানের সুরে।।
সেথায় তরু তৃণ যত
মাটির বাঁশি হতে ওঠে গানের মতো।
আলক সেথা দেয় গো আনি
আকাশের আনন্দবাণী,
হৃদয়মাঝে বেড়ায় ঘুরে গানের সুরে।।

পূজা: কূল থেকে মোর গানের তরী - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
কূল থেকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে
সাগর-মাঝে ভাসিয়ে দিলেম পালটি তুলে।।
যেখানে ঐ কোকিল ডাকে ছায়াতলে
সেখানে নয়,
যেখানে ঐ গ্রামের বধু আসে জলে
সেখানে নয়,
যেখানে নীল মরণলীলা উঠছে দুলে
সেখানে মোর গানের তরী দিলেম খুলে।।
এবার, বীণা, তোমায় আমায় আমরা একা---
অন্ধকারে নাই বা কারে গেল দেখা
কুঞ্জবনের শাখা হতে যে ফুল তোলে
সে ফুল এ নয়,
বাতায়নের লতা হতে যে ফুল দোলে
সে ফুল এ নয়---
দিশাহারা আকাশ-ভরা সুরের ফুলে
সেই দিকে মোর গানের তরী দিলেম খুলে।।

পূজা: তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে
মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেল কোন্‌ ক্ষণে।।
রবি ঐ অস্তে নামে শৈলতলে,
বলাকা কোন্‌ গগনে উড়ে চলে---
আমি এই করুণ ধারার কলকলে
নীরবে কান পেতে রই আনমনে
তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে।।
দিনে মোর যা প্রয়োজন বেড়াই তারি খোঁজ করে,
মেটে বা নাই মেটে তা ভাবব না আর তার তরে
সারাদিন অনেক ঘুরে দিনের শেষে
এসেছি সকল চাওয়ার বাহির-দেশে,
নেব আজ অসীম ধারার তীরে এসে
প্রয়োজন ছাপিয়ে যা দাও সেই ধনে
তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে।।

পূজা: যারা কথা দিয়ে তোমার কথা বলে - রবীন্দ্র সঙ্গীত

0 comments
যারা কথা দিয়ে তোমার কথা বলে
তারা কথার বেড়া গাঁথে কেবল দলের পরে দলে।।


একের কথা আরে
বুঝতে নাহি পারে,
বোঝায় যত কথার বোঝা ততই বেড়ে চলে।।


যারা কথা ছেড়ে বাজায় শুধু সুর
তাদের সবার সুরে সবাই মেলে নিকট হতে দূর।
বোঝে কি নাই বোঝে
থাকে না তার খোঁজে,
বেদন তাদের ঠেকে গিয়ে তোমার চরণতলে।।

পূজা: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,
বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে।।
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে।।
নীরব নিশি তব চরণ নিছায়ে
আঁধার-কেশভার দিয়েছে বিছায়ে।
আজি এ কোন্‌ গান নিখিল প্লাবিয়া
তোমার বীণা হতে আসিল নাবিয়া।
ভুবন মিলে যায় সুরের রণনে,
গানের বেদনায় যাই যে হারায়ে।।

পূজা: আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
ঐ বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয়্পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে—
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে?।

পূজা: আমার সুরে লাগে তোমার হাসি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
আমার সুরে লাগে তোমার হাসি,
যেমন ঢেউয়ে ঢেউয়ে রবির কিরণ দোলে আসি।।


দিবানিশি আমিও যে ফিরি তোমার সুরের খোঁজে,
হঠাৎ এ মন ভোলায় কখন তোমার বাঁশি।।


আমার সকল কাজই রইল বাকি, সকল শিক্ষা দিলেম ফাঁকি।
আমার গানে তোমায় ধরব ব'লে উদাস হয়ে যাই যে চলে,
তোমার গানে ধরা দিতে ভালোবাসি।।

পূজা: গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে
রুদ্ধবাণীর অন্ধকারে কাঁদন জেগে ঊঠে।।


বিশ্বকবির চিত্তমাঝে ভুবনবীণা যেথায় বাজে
জীবন তোমার সুরের ধারায় পড়ুক সেথায় লুটে।।


ছন্দ তোমার ভেঙে গিয়ে দ্বন্দ্ব বাধায় প্রাণে,
অন্তরে আর বাহিরে তাই তান মেলে না তানে।
সুরহারা প্রাণ বিষম বাধা---সেই তো আঁধি, সেই তো ধাঁধা---
গান-ভোলা তুই গান ফিরে নে, যাক সে আপদ ছুটে।।

পূজা: অরূপ, তোমার বাণী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
অরূপ, তোমার বাণী
অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক্‌ সে আনি।।
নিত্যকালের উৎসব তব বিশ্বের দীপালিকা---
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ, জ্বালাও তাহার শিখা
নির্বাণহীন আলোকদীপ্ত তোমার ইচ্ছাখানি।।
যেমন তোমার বসন্তবায় গীতলেখা যায় লিখে
বর্ণে বর্ণে পুষ্পে পর্ণে বনে বনে দিকে দিকে
তেমনি আমার প্রাণের কেন্দ্রে নিশ্বাস দাও পুরে,
শুন্য তাহার পূর্ণ করিয়া ধন্য করুক সুরে---
বিঘ্ন তাহার পুণ্য করুক তব দক্ষিণপাণি।।

পূজা: তোমার নয়ন আমায় বারে বারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
তোমার নয়ন আমায় বারে বারে বলেছে গান গাহিবারে।।
ফুলে ফুলে তারায়
বলেছে সে কোন্‌ ইশারায়
দিবস-রাতির মাঝ-কিনারায় ধূসর আলোয় অন্ধকারে।
গাই নে কেন কী কব তা,
কেন আমার আকুলতা---
ব্যথার মাঝে লুকায় কথা, সুর যে হারাই অকূল পারে।।
যেতে যেতে গভীর স্রোতে ডাক দিয়েছ তরী হতে।
ডাক দিয়েছ ঝড়-তুফানে
বোবা মেঘের বজ্রগানে,
ডাক দিয়েছ মরণপানে শ্রাবণরাতের উতল ধারে।
যাই নে কেন জান না কি---
তোমার পানে মেলে আঁখি
কুলের ঘাটে বসে থাকি, পথ কোথা পাই পারাবারে।।

পূজা: তোমার বীণা আমার মনোমাঝে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

0 comments
তোমার বীণা আমার মনোমাঝে
কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে।।


আকাশ যবে শিহরি উঠে গানে
গোপন কথা কহিতে থাকে ধরার কানে কানে---
তাহার মাঝে সহসা মাতে বিষম কোলাহলে
আমার মনে বাঁধনহারা স্বপন দলে দলে।
হে বীণাপানি, তোমার সভাতলে
আকুল হিয়া উন্মাদিয়া বেসুর হয়ে বাজে।।


চলিতেছিনু তব কমলবনে,
পথের মাঝে ভুলালো পথ উতলা সমীরণে।
তোমার সুর ফাগুনরাতে জাগে,
তোমার সুর অশোকশাখে অরুণরেণুরাগে।
সে সুর বাহি চলিতে চাহি আপন-ভোলা মনে
গুঞ্জরিত-ত্বরিত-পাখা মধুকরের সনে।
কুহেলী কেন জড়ায় আবরণে---
আঁধারে আলো আবিল করে, আঁখি যে মরে লাজে।।