Tuesday, December 22, 2009

স্বদেশ: আমার সোনার বাংলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥


কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥


তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥


ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥


ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥
গগন হরকরা রচিত "আমি কোথায় পাবো তারে" থেকে সুর নকলকৃত প্রথম ১০ লাইন যা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
কবিতাটির রচনাকাল :

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত মোট ১২ বছর জমিদারীর কাজে পূর্ব বঙ্গের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে ছিলেন । কবিতাটি এ সময়ের রচিত বলে ধারণা করা হয় ।
কবিতার প্রথম প্রকাশ :
বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১৯০৫ সালে প্রথম কবিতাটি প্রকাশিত হয় ।
গানটির রচনাকাল :
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে বৃটিশ সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয় । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৬ সালে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী চেতনা হতে ।
গানের সুর :
গানটির সুরকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত মোট ১২ বছর জমিদারীর কাজে পূর্ব বঙ্গের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে ছিলেন । কুষ্টিয়া জেলার বাউল শিল্পী গগন হরকরার "আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে" গানের সুরে তিনি এ গানের সুর করেন ।
প্রথমবার গাওয়া হয় :
১৯০৭ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক গণ সমাবেশে প্রথম এই গান গাওয়া হয়।
প্রথম রেকর্ড :
শিল্পী গোপালচন্দ্র সেনের কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করা হয় ।
আরো কিছু তথ্য :এই গানটিতে মোট ২৫ টি চরণ আছে । এর মধ্যে প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় । গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান গ্রন্থের অর্ন্তগত । বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান তার পরিচালিত জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০) চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয় ।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত :
১৯৭১ সালের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। ৩ মার্চ তারিখে পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ইশতেহারে 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
প্রথমবার সরকারীভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় :
১৯৭১ সালের এপ্রিল ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
একটি অর্জন :ব্রিটেনের জনপ্রিয় দৈনিক গার্ডিয়ান বেইজিং অলিম্পিকে পৃথিবীর ২০৫ টি দেশের জাতীয় সংগীতের বিবেচনায় সেরা ১০ টি জাতীয় সংগীত নির্বাচন করে । এতে , আমাদের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। প্রথম হয় উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত । তৃতীয় হয় তাজাকিস্তানের জাতীয় সংগীত।
ডাউনলোড লিংক :
যন্ত্রসংগীত-১
যন্ত্রসংগীত-২
যন্ত্রসংগীত-৩
গান(২৫ চরন-সর্ম্পূণ গান)
লিখেছেন : হোসাইন 

0 comments:

Post a Comment