সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
লালন কয় জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে । ।
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারীলোকের কী হয় বিধান
বামুন চিনি পৈতে প্রমাণ
বামনী চিনি কিসেরে । ।
কেউ মালা কেউ তসবি গলে
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে
আসা কিংবা যাওয়ার কালে
জাতের চিহ্ণ রয় কারে । ।
জগৎ জুড়ে জাতের কথা
লোকে গল্প করে যথতথা
লালন বলে জাতের ফাতা
ডুবিয়েছি সাধ বাজারে । ।
এটা লালনের সাধনপর্বের স্হূলপর্যায়ের গান, অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমান ইত্যাদি জাত-পাতের সমস্যা থাকলে সাধনা হবে না, সবার আগে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। জনশ্রুতি আছে কালীনদীর ঘাটে লালন সাঁইকে অসুস্হ অবস্হায় মলম শাহ খুঁজে পেয়ে বড় করেন, ফলে লালন আসলে কোন জাতের লোক এ নিয়েও জনমনে একটা কৌতুহল কাজ করে। কিন্তু লালন নিজেকে কোন বিশেষ জাত-পাতের অংশের উর্ধ্বে মানুষ হিসেবে ভাবতেন।
মানুষের শরীরে কোন জাতের চিহ্ণ নেই, দুনিয়াতে সব মানুষ সমান, জাত পরিচয় এসব মানুষেরই সৃষ্টি। দৃষ্টান্তস্বরুপ লালন বলছেন, সুন্নত অর্থাৎ খতনা দেখে না হয় মুসলমান পুরুষকে চেনা গেল। কিন্তু নারী কি মুসলমান না হিন্দু কিভাবে বুঝব? একইভাবে পৈতা দেখে না হয় বামুন চেনা গেল কিন্তু বামনীদের কি ধরে চিনব। তাহলে জাত যদি থাকবেই, মেয়েদের ব্যাপারে ধর্মগুলো এত অনুদার কেন, তাদের কেন জাতবিচারের জন্য কোন সিস্টেম নেই। সুতরাং সূক্ষবিচারে ধর্মমতেই জাতের কোন বালাই নেই, সবাই একই মায়ের সন্তান। সুন্নতে খতনা আসলে ট্রাইবাল চিহ্ন যা অনেক আগে থেকে চলে আসছে। আর হিন্দুধর্মে কারও পৈতা বা উপনয়ন দেয়ার মানে হল ব্রক্ষ্মোপদেশ নিয়ে এবার দ্বিতীয় জন্ম হল।
তাই বাহ্যিক আবরণ, আভরণ দেখে আমরা মানুষ বিচার করলে ভুল করব। এছাড়া জন্ম বা মৃত্যুর সময় আমাদের কোন জাত থাকে না। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ, মড়ার আবার জাত কিসের? মুসলমানদের মৃত্যুর পরে জানাযার নামাজে কোন আযান দেয়া হয় না কারণ এই আযান জন্মের পরপরই নবজাতকের কানে দিয়ে দেয়া হয়। জন্মের আগেই যেখানে জ্যান্তে-মরার আহবান, সেখানে জাতের বড়াই আসে কোথা থেকে?
দুনিয়ায় এই যে জাতের এত সমস্যা লোকে বলাবলি করে, লালন বলেন সেই জাতিভেদকে তিনি সাধের বাজারে, সদানন্দের বাজারে ডুবিয়েছেন।
সূত্রঃ সামু
Monday, October 17, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment